শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২

ছিলিমপূরের ইতিহাস (2)

 ছিলিমপূরের ইতিহাস

(মোঃ নূরুল ইসলাম মাষ্টারের পান্ডুলিপি থেকে নেওয়া)

(২য় অংশ)

ছিলিমপুরের ছোট তরফের কাছারি বাড়ি ছোট হলেও এর নায়েব গোমস্তারা খুব হামবড়া ও প্রতাব দেখাতো। সমস্ত এলাকাই পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতেন। প্রজারা কাছারিতে এলে খুব সমাদর করতেন এবং না খাইয়ে যেতে দিতেন না। সর্বশেষ নাম ডাকি নায়েব ছিলেন আটিয়ার সৈয়দ আব্দুল হক (সতু মিয়া)। সুপুরুষ খুব মিশুক ব্যাক্তি। সামাজিক যে কোন উৎসবে তার উপস্থিতি ছিল নিশ্চিত। বর্তমান ছিলিমপুর হাইস্কুলে তাঁর অবদান অপরিসীম। তিনি যদি আটিয়া হতে তাঁর কাছারি বাড়িটি ছিলিমপুর স্কুলের জন্য ব্যবহারের নিমিত্তে লীজ এনে না দিতেন তবে উক্ত প্রতিষ্ঠান পূর্নত্বের মুখ দেখতো কিনা জানি না। এ কাছারির পুন্যাহ্ উৎসব পহেলা আষাড় আরম্ভ হত। প্রথম খাজনা দাতা দের মধ্যে রূপসী যাত্রার প্রজাদের কে সুযোগ দেওয়া হত। তাদের টাকা দিয়েই শুভ পুন্যাহ যাত্রা হত। এ কারনেই রূপসী গ্রামের সাথে যাত্রা শব্দটি যোগ হয়ে রূপসী যাত্রা নাম ধারণ করেছিল। রূপসীযাত্রা মৌজাটি যখন গ্রাম হিসাবে স্বীকৃতি পায় তখন এ কাছারি থেকেই নাম প্রদান করা হয়। বর্তমান ছিলিমপুর জামে মস্ জিদের সামনের পুকুরের পূর্ব পাশেই ছিল বহুখ্যাত কাছারি বাড়ি। এখানেই ছিলিমপুর হাইস্কুল এ নামেই প্রথম চালু হয়। 


ছিলিমপুর জামে মস্ জিদটি প্রথম চালু করেন ঢাকাইয়া বেপারী মহাজনগণ। পরে এতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন আলিমুদ্দিন হাজী। গড়াসিন নান্দুরিয়ার ফজর মুছল্লী ছিলেন এ মসজিদের আদি মোয়াজ্জিন। তার কবর পুকুর ঘাটের কাছে আম গাছের গোড়াতেই অবিস্থিত। আলিমুদ্দিন হাজী মস্ জিদের প্রথম মুতুওয়াল্লী। তাঁর ছেলে মোন্তাজ বেপারী এর পর এভাবে তার ভাই ফালু মুিন্স তারপর তার ভাতিজা জালাল, এখন এলাহি বকস্ এবং আলতাফ হোসেন কমিটির সেক্রেটারী হিসাবে কাজ করে আসছেন। ছোট কাছারি কাছেই ছিল আলিমুদ্দিন হাজী সাহেবের বড় গোলাবাড়ি নামে একটি ব্যাবসায়ী দোকান। যার দেওয়ানী হিসেবে বরুহার মানিক মিয়া কাজ করতেন। তিনি রূপসী-ঘুনিকিশোর মৌজায় অনেক জমি সম্পত্তি করেছিলেন। শেষে বিরাট অংশ টাকার গড়বড় হওয়ায় তার যাবতীয় সম্পত্তি আলীমুদ্দীন হাজীকে লিখে দিয়ে চলে যান। 


ছিলিমপুরের অতীত একটি সুপ্রিও খাদ্যের নাম ডাক আছে শোনা যায়। এটা ছিল দই। আজ যেমন বগুড়ার দৈইয়ের নাম আছে, অতীতে ঐ রকম ছিল ছিলিমপুরের দৈইয়ের নাম ডাক। এখানে নাগরপুরের মুচিরাম ঘোষ, রামচরণ ঘোষ, গৌর ঘোষ, হাইল্যা ঘোষ খুব পাকা ঘোষ ছিল। এদের বংশধর দুই একজন আজও ছিলিমপুর বাজারের দক্ষিন পশ্চিম কোনে সামান্য মিষ্টি ছানা ঘোলের ব্যাবসা দিয়ে কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। এ সমস্ত মিষ্টি, দই, চন্দনচ‚ড় দৈই, মাঠা, ঘোল, ক্ষীর, ঘি, মাখন, ছানা, মালাই, এগুলো বড় স্বাদ করে বানাত। প্রবীন লোকেরা আজও এ সবের নাম করে থাকেন। এখনকার ঘোসেরা তাদের দ্রব্য সামগ্রী তদকালে বাংলার সর্বত্রই চালান দিত। এর কারণও যথেষ্ট ছিল। এখানে গাভীর দুধ খাঁটি পাওয়া যেত। গাভীগুলি লতা জাতীয় মিষ্টি ঘাস খেত বলে দুধও বেশ মিষ্টি এবং স্বাদযুক্ত ছিল। তাই দুধ দ্বারা তৈরি খাদ্য সামগ্রী প্রচুর তৈরি হত। আজ সে গো চারন ভ‚মিও নাই, দক্ষ ঘোষও নাই। মরেও যে দু -চার ঘোষ আছে কখন পাত্তারি গুটিয়ে স্ব-গ্রাম নয়ার চর নাগরপুর কিংবা ভারত চলে যায় বলা মুস্কিল। এরা আপন সহোদর ভাই। যতীন চন্দ্র ঘোষ প্রবীণ আর তার ভাই কানাই লাল ঘোষ। কানাই অবশ্য অশিক্ষিত ব্যাক্তি। ঘোষ ব্যাবসায় ভাটা পড়ায় অন্য পেশা অবলম্বন করতে বাধ্য হচ্ছে। ছিলিমপুরে হরেক জাতির মানুষ বাস করত। আজও তার ভগ্নাংশ বিদ্যমান আছে। কোন সম্প্রদায় পেটের দায়ে ভিন্ন পেশা অবলম্বন করে অন্যত্র চলে গেছে। আজও যারা আছে তাদের মাওড়া, চৌহান, ধুনিয়া, পুশিয়া, চুড়িওয়ালা প্রধান। ছিলিমপুর এক সময় নদী বন্দর ছিল। ইউরোপীয় দের বড় বড় পাটের গুদাম ছিল। অত্র এলাকায় কাগমারীর হাট আগে ও পরে ছিলিমপুরের হাট ও কোল ছিল। কাগমারী লৌহজঙ্গ নদীর উজানে বালি পড়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসে। এবং এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আজ সেখানে মৌলানী ভাসানী প্রতিষ্ঠিত সরকারি এম এম আলী কলেজ অবস্থিত। 

                             - ঃ সমাপ্ত ঃ -

(প্রকাশকঃ মোঃ নূর কুতুবুল আলম পলাশ)


বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২

ছিলিমপুরের ইতিহাস

 ছিলিমপুরের ইতিহাস

মোঃ নূরুল ইসলাম মাস্টার 

( রূপসীযাত্রা গ্রামের প্রবীন ব্যাক্তি এলিহি বকস্, আদম বেপারী/কুরপান সরকার এদের কাছে শোনা)

ছিলিমপুরের আদি নাম ছিল শ্রীরাম পুর। লোক মুখে উচ্চারনের বিভ্রাটে ছিরামপুর ছিলিমপুরে রূপ নিয়েছে। জনৈক প্রবীন ব্যাক্তির মতে প্রথমে শ্রীরামপুর তারপর ছিরামপুর এবং শেষে হয়েছে ছিলিমপুর। 
আদতে ছিলিমপুর এখন যেমন বাজার বা হাটখোলা আগে তা ছিল না। তখন ছিল বন্দর বা কোল- ছিলিমপুর কোল। এখানে সুদূর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগজ্ঞ, আসাম, খুলনা, রাজশাহী প্রভৃতি স্থান হতে জাহাজ, ইষ্টিমার, লঞ্চ, বড় বড় ব্যাবসায়ী নৌকা আসতো। মাল বিকি কিনি করতো যাত্রী সাধারণ নামত আবার বোঝাই হলে চলে যেত। ছিল মস্ত বড় ব্যবসায়ের কেন্দ্র। ইউরোপ মহাদেশের পাট ব্যবসায়ীরা  এখানে পাটের গুদাম খুলেছিলেন। তার একটি আর. সিম কোম্পানীর অফিস ছিল এখানে। আরও একটি অফিসের নাম ও জায়গার কথা শুনা যায়। তা ছিল হাটখোলারই দক্ষিন দিকে খোলা জায়গায়। স্থানীয় লোকেরা আজও এ স্থানটিকে ‘কাইয়্যা’র অফিস বলে। এ অফিসের মালিক ইউরোপের কোন এক পাট কোম্পানীর সাহেব ছিল। 
ছিলিমপুরের যৌবন সময়ে টাংগাইলের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এখানে দোকান/গুদাম খুলে কায় কারবার করতেন। এদের মধ্যে আমি নিজেই দেখেছি কাগমারী, সহবতপুর, দেলদুয়ার, পোড়াবাড়ি, চাড়া বাড়ি, সয়া, এলেঙ্গা ও টাংগাইলের কয়েকটি বড়বড় দোকান। এরা কাপড় চোপড়, লোহা লক্কর, চিনি, ধান, পাট, মিষ্টি, তাঁতের কাপড়, কাঁসা পিতল সহ নানা প্রকার সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। আজও যেমন বাজারটি উত্তর দক্ষিনে লম্বা প্রাথমিক অবস্থায় তেমনি উত্তর দক্ষিনেই ছিল। স্থায়ী বড় দোকানগুলি বাজারের পূর্বে এবং পশ্চিমে অবস্থিত ছিল। সপ্তাহে একদিন হাট বসত এখনকার তম শুক্রবারেই। ছোট খাট অস্থায়ী দোকান গুলি হাটে ঘুন্টিঘর তৈরি করে ব্যবসা করতো। এদেরকে কাছারি ঘর বলা হত। এ সময়ে ছিলিমপুরে সবচেয়ে জৌলুসপূর্ন জমিদারের অফিস ছিল। তারমধ্যে করটিয়ার ছোট তরফ ও বড় তরফের অফিসই প্রধান। তারা দেলদুয়ার, সাওয়ালী মহেরা, ভাটরার জমিদার, ঢাকার নবাব প্রধান। কিন্তু করটিয়াদের অংশ এ হাটে বেশি ছিল এ থেকে প্রচুর আয়ও তাঁরা পেতেন। 
বড় তরফ করটিয়াদের কাছারী অফিস ছিল বাজারের পূর্ব দক্ষিন পাশে। বর্তমান দুই পাকা রাস্তার রাস্তার পশ্চিম পাশে। আমরা ছোট কালে কাছারী অফিসগুলির ঠাট পাট কিছু দেখেছি। প্রতি বছর শুভ ‘পুন্যাহ’ উৎসবের সময় অর্থাৎ নতুন খাজনা কর আদায়ের সময় বিরাট রকমের ধুম ধাম হত। মিষ্টি, দই, চিড়া, পোলাও, মাংস প্রজারা যারা খাজনা দিতে আসত ও নিমন্ত্রিত ব্যাক্তিদেরও খাওয়ান হত। তারপর নাচ- গানও হত। তখনকার আরও একটি উৎসবের কথা শুনা যায়। ওটা ছিল ‘ছিলিমপুরের মেলা’। এ মেলা প্রায় ছয় মাসাধিক কাল স্থায়ী হত। এখানে একটি কালী মন্দিরও ছিল। দূর দূরান্ত থেকে মেলায় লোক আসত। ব্যবসায়ীরা দোকান খুলত, হরেক রকমের যাত্রাগান, পুতুল নাচ, সারকাস, ম্যাজিক শো, নানা প্রকার খেলা ধূলা হত। মেলায় দোকানগুলি সুন্দর করে সাজান হত। এর পরিচালনায় হিন্দু মহাজনেরাই বেশি থাকতো। এ মেলা ছিল টাংগাইলের মধ্যে বিখ্যাত মেলা। নানা স্থান হতে পূন্যার্থীরা মেলা দর্শন ও সদাই করতে আসতেন। একবার এই মেলায় এমনি অগ্নিকান্ড ঘটে যে তা থেকে সামান্য দোকানদার পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। সম্পূর্ন মেলা স্থান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই থেকে মেলা যে বন্ধ হয়ে গেল আর কখনও মেলা জমত না। আমাদের প্রামের লোকেরা এখনও কালী বাড়ীর চক বা মেলার চক বলে উল্লেখ করে থাকেন। ৪০/৫০ বছর আগেও এখানে কৃষকেরা হাল বাইতে আসলে লাঙ্গলের ফলায় পোড়া কাঠ কয়লা মাটি, চিনা মাটির পুতুল, ভাঙ্গা চোড়া খাপড়া, মারবেল, তামার পয়সা, রূপার টাকা কড়ি, পুতির মালা পাওয়া যেত। বন্যায় মাটি পড়ে স্থানটি অনেক উচু হয়ে গেছে তাই এখন আর চিহ্ন মাত্র অবশিষ্ট নেই।  

(১ম অংশ)



রবিবার, ২৪ মে, ২০২০

ঢুক ঘরে

আর কতকাল 
দিবি ফাঁকি 
দিন তোর শেষ 
এই দুনিয়া মিছা আশা 
চলনা আপন দেশ। 

খাইল পড়লি 
দেখলি শুনলি 
আর কি তুই চাস 
ইটের ঘরে 
থাকলি রইলি 
মাটির ঘরে বাস। 

যাদের তুই 
ভাবলি আপন 
তারাই হল পর 
কি ভাবে তোর মরন হবে 
সেই চিন্তা কর। 

হাত তো খালি দেখি 
কেমনে যাবি পাড়ে 
কড়ি ছাড়া নেয়না মাঝি 
কানবি নদীর ধারে। 
যেজন তোরে নিব পাড়ে 
তাইরে বাধ্য কর 
আয়ু বেলা ডুবে এলো
ঢুকনা আপন ঘর। 

লোকে কি বলে

মেয়ে বলে বাবা
তুমি বড় হাবা
তুমি কি যে লেখ
বাইরে গিয়ে দেখ
লোকে কি বলে
ফেলে দাও জলে
কাজ নাই যার
আর যে বেকার
কি যে লেখে ছাতা
ও গুলে কি কবিতা
কাল দোকানে বসে
কাজ করবে কষে
দরকার নাই লেখা
ও গুলো হয়েছে দেখা

শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

নির্বাচনী হাওয়া

নির্বাচনের 
                             বইলো হাওয়া 
বাকি আছে 
                         এক বছর 
টাউটেরা 
                              মোছ তাওয়ায় 
ঝারা মারে
                           গাও গতর 
নানা ছলে 
                          নানা দলে 
ভিড়ে করবে 
                              টাকার চাষ
সেই মানষে
                            গ্রাম শহরে
ঘন ঘন 
                              দিচ্ছে কাশ
মনে হয় 
                              ঈদ আইছে
ধোয়া মোছার 
                               অভাব নাই
এবার বুঝি 
                                 হইব খাড়া 
দেশ দরদী 
                                   গুনের ভাই। 

চুক্তি

বাঘ করল রাগ
সিংহ করল গোসা
বনের পশু প্রজাকুল
তাদের মরন দশা
বাঘ বলে আমি রাজা
ভোট দিছে সবে
আমার হুকুম থাকবে বহাল
মানতে সবার হবে।
সিংহ বলে আমার বাবা
ছিল রাজা তুই বেটা কেরে ?
গদি ছাড় রাজাকার
নইলে নেব কেড়ে।

বাঘ বলে এসো গোঘ
সংসদে যাই চলে
সবাই শুনবে সবাই মানবে
ওখানে যাই বলে।
গোঘ বলে গুল্লি মারি সংসদ
কথা দিতে হবে
আমার কথায় নির্বাচনী
কেয়ার টেকার হবে।

একবার তুই একবার আমি
এই হোক এক চুক্তি
পরামর্শে করব কাম
আসবে দুয়ের মুক্তি।
বিরোধী দলের তরবারি
সরকারি দলের ঢাল
মার ফিরাও চালাও চলুক
বছর পাঁচেক কাল।

পাতি নেতা

আতি পাতি নেতার দল
গরিব মারার কোঁচ কল
রিলিফ মাল এলে পরে
সব তারা তোলে ঘরে
গরিব লোক চাইতে গেলে
জুতা মারে গালে গালে
নালিশ করলে বিচার নাই
দেশ ছেড়ে চল যাই। 

ছিলিমপূরের ইতিহাস (2)

 ছিলিমপূরের ইতিহাস (মোঃ নূরুল ইসলাম মাষ্টারের পান্ডুলিপি থেকে নেওয়া) (২য় অংশ) ছিলিমপুরের ছোট তরফের কাছারি বাড়ি ছোট হলেও এর নায়েব গোমস্তারা...